ব্রেন ডেড অব ন্যাটো


তিন বছরেরও কম সময় আগে ‘ন্যাটোর মস্তিষ্কের মৃত্যু ঘটার’ (ব্রেন ডেড অব ন্যাটো) বিষয়ে আক্ষেপ শোনা গেছে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর কণ্ঠে। সেসময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি তখন পশ্চিমাদের এই সামরিক জোটভুক্ত মিত্রদের এই বলে হুমকি দিচ্ছিলেন, যাঁরা ন্যাটোর জন্য পর্যাপ্ত করেননি, তাঁদের সুরক্ষায়ও কিছু করা হবে না। তখন মাঁখো ওই আক্ষেপ করেন। এরপর জোটসঙ্গীদের সঙ্গে নামমাত্র আলাপ–আলোচনার পর আফগানিস্তান (ন্যাটোর মিশন) থেকে যখন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করে নেন, তখনও পরিস্থিতির এমন কিছু ইতর–বিশেষ হয়নি। তালেবানের দখলে কাবুল চলে যাওয়ার পর ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল পত্রিকা সম্পাদকীয় লিখল; শিরোনাম ছিল—‘কীভাবে ন্যাটো ভাঙলেন বাইডেন’।
তবে এখন দেখা যাচ্ছে, ন্যাটোর মস্তিষ্কের মৃত্যু ঘটেনি কিংবা জোট ভেঙেও পড়েনি। ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযান সামরিক জোটটিকে নতুন করে জীবন ইজারা দিয়েছে; শীতল যুদ্ধের পর থেকে ন্যাটো কখনো এত বেশি রাজনৈতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ ও সামরিকভাবে শক্তিশালী অবস্থানে ছিল না।
ইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান অভিযানের বিরুদ্ধে ন্যাটো অভিন্ন অবস্থান নিয়েছে। এমনকি জার্মানি রক্তপাতহীন প্রতিরক্ষার ওপর জোর দিয়ে দৌঁড়ঝাপ শুরু করলেও অবশেষে তারাও ইউক্রেনে ভারী অস্ত্রশস্ত্র পাঠাচ্ছে। ন্যাটোভুক্ত অন্যান্য দেশ আরও অনেক কিছু করছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, পোল্যান্ড, কানাডা ও যুক্তরাজ্য রয়েছে নেতৃত্বের অবস্থানে। অস্ত্র ও গোলাবারুদ পাঠানোর ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে তারা।
ইউরোপের পূর্বাঞ্চলীয় রণাঙ্গনের অগ্রভাগে থাকা দেশগুলোতে ন্যাটো তাদের বাহিনীর উপস্থিতি দ্বিগুণ করেছে, যোদ্ধা গ্রুপের সংখ্যা চার থেকে বাড়িয়ে করেছে আট। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রও ইউরোপে তাদের শক্তিমত্তা বাড়াচ্ছে। এরই মধ্যে তারা সেনাসংখ্যা ৮০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১ লাখে উন্নীত করেছে।
এমনকি যেসব দেশ দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের নিরপেক্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে, সেই সুইডেন ও ফিনল্যান্ড এখন ন্যাটোভুক্ত হওয়ার ইচ্ছার কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিচ্ছে। তুরস্কের এ বিষয়ে উচ্চারিত ও অনুচ্চারিত আপত্তি এবং ‘ছদ্ম–বাস্তববাদীদের’ তথাকথিত অতিরঞ্জিত উদ্বেগ সত্ত্বেও দেশ দুটি প্রায় নিশ্চিতভাবে রুশ ‘ভালুককে’ উসকে দেওয়ার বিষয়ে তাদের অবস্থানের কথা প্রকাশ করেছে।
Leave a Reply